রসরাজ দাস পেশায় একজন জেলে। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে ফেইসবুকে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা রসরাজ দাশ কে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। অপরদিকে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এই পোস্টকে পুঁজি করে কিছু সুযোগ সন্ধানি ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হিন্দু তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে আগুন দেয়, মন্দির ভাঙচুর করে।ক্ষণিকের ব্যবধানে নাসিরনগর এক অশান্তির নগরীতে পরিণত হয়।দেশেজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে নাসিরনগর।
ঘটনার আরো গভীরে প্রবেশ করলে জানা যায়, রসরাজ দাশ নামক ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে কাবাঘরের ছবি ও হিন্দু দেবতাদের ছবি জুড়ে দিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত হিসেবে গ্রেফতারকৃত রসরাজ দাশের কোন ফেইসবুক প্রোফাইল ছিল না। এটি কিভাবে চালাতে হয় তাও সে জানত না। বরং জেলে রসরাজ দাশের নাম ব্যবহার করে এক শ্রেণীর মুসলিম সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী একটি ভুয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়। স্বভাবতই এই পোস্টের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সৃষ্টি হয় একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগায় সেই মুসলিম উগ্রবাদী ও রাজনৈতিক সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী । তারা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয় এবং মন্দিরে ভাংচুর চালায়।বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে পিটুনির পর রসরাজকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যে কিনা নির্দোষ, কেবল ধর্মীয় সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র।এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শাসকদল আওয়ামী লীগ নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নাসির নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপসম্পাদক আবুল হাশেম, হরিপুর ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক মিয়া এবং চাপর তলা ইউনিয়নের সভাপতি সুরুজ আলিকে বহিষ্কার করে।
নাসিরনগরে ঘটে যাওয়া ধর্মীয় সংঘাত কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইদানিংকালে তো বটেই বরং যুগ যুগ ধরে সুখে শান্তিতে বসবাস করা হিন্দু- মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে দাঙ্গা তথা সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির ঘটনা বহু পুরনো। তবে সময়ে সময়ে কারণ কিংবা দাঙ্গা সৃষ্টির হাতিয়ার বদলেছে। আগে গুজব ছড়িয়ে পড়তো মানুষের মুখে মুখে এখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যত ধরণের সামাজিক অপরাধ বা বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছে তার মূল কারণ মূল্যবোধের অবক্ষয়। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নানা গুজব কিংবা মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি আছেই।এসব গুজব, কুতথ্য ঠেকাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ঠুনকো কারণে যেন কেউ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে না পারে সেজন্য জনমত গঠন অতীতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলাফল বোঝানো। সর্বোপরি এ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। গুজব,কুতথ্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য ইত্যাদি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যেন ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিশেষে মূল্যবোধের চর্চা জারি রাখতে হবে।